আনারস চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো চারা

 

আনারস (ananas comosus ) বিশ্বের জনপ্রিয় ফল গুলির মধ্যে একটি । এটি পৃথিবীর প্রায় সকল মানুষের পছন্দনীয় একটি ফল ।তবে কেউ কেউ আনারস পছন্দ করে না। এটি তার স্বাদ ,পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা জন্য ব্যাপকভাবে পরিচিত। সঠিক জাত নির্বাচন এবং উন্নত জাত চাষ পদ্ধতি অবলম্বন করে আনারস চাষ থেকে ভালো ফলন পাওয়া যায়।



আনারসের চাষ করে বাংলাদেশের অনেক মানুষ অনেক লাভবান হয়ে থাকে। আনারস চাষ ভালো ও উন্নতমানের জাত দিয়ে করলে অনেক লাভবান হওয়া যায়। আনারসের সাধারণত কোন বীজ হয় না। আনারস সাধারণত পার্শ্ব চারা, মুকুট চারা, বোটার চারা, গুড়ি চারা দিয়ে আনারসের বংশবিস্তার করা হয়। এর মধ্যে পার্শ্ব চারা বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য অনেক ভালো । 

পোস্ট সুচিপত্রঃ আনারস চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো চারা  


আনারসের ভালো জাত গুলো 

  1. হানিকুইন
  2. জায়েন্টকিউ
  3. ঘোড়াশাল
  4. কুইন
  5. কুইন
  6. মরিস
  7. রেড স্প্যানিশ
  8. পরোলা
  9. ক্যাভিড
  10. সারাওয়াক
  11. রেড কায়েন
  12. আসাম
  13. চায়না আনারস
  14. নিউলুকাস
  15. গন্ধরাজ
  16. পুনের আনারস
  17. গোল্ডেন আনারস
  18. হাওয়াইয়ান আনারস
  19. সুইট নাইট

আনারসের ভালো চারার জাতগুলোর বৈশিষ্ট্য 

  • হানিকুইনঃ আনারসের মিষ্টি জাতের মধ্যে সবচেয়ে মিষ্টি আনারস হল হানিকুইন। এই আনারসের পাকা শাঁস হলুদ বর্ণের হয়ে থাকে। চোখ সূচালো ও উন্নত চোখ সূচালো ও উন্নত। হানি কুইন এর গড় ওজন ১ কেজি হয়ে থাকে।
  • জায়েন্টকিউঃ এই জাতের আনারসের গাছের পাতায় কোন কাঁটা থাকে না। এ জাতের আনারস পাকলে শাঁস হালকা হলুদ বর্ণ ও সবুজ ভাব থাকে। গড় ওজন ২ কেজি হয়ে থাকে। চোখ প্রশস্ত ও চাপটা।
  • ঘোড়াশালঃ এ জাতের আনারস পাকলে লালচে ও ঘিয়ে সাদা রঙের হয়ে থাকে। চোখ প্রশস্ত ও গড় ওজন ১.২৫০ কেজি হয়ে থাকে। এবং এ জাতের আনারসের পাতায় কাঁটাযুক্ত থাকে চওড়া ও ঢেউ খেলানো হয়। 
  •  কুইনঃ এই জাতের আনারস ছোট ও মাজারে আকারের ফল, খোসা পাতলা , স্বাদ-মিষ্টি ও হালকা টক হয়ে থাকে। ভিটামিন সি ও ফাইবার সমৃদ্ধ। 
  • কাইনঃ আকারের ফল, এর খোসা তুলনামূলকভাবে মোটা হয়ে থাকে ও স্বাদ-মিষ্টি। ভিটামিন এ,  ভিটামিন সি এবং মিনারেল সমৃদ্ধ এ জাতের আনারস। 
  • মরিসঃ এ জাতের আনারস সাধারণত মাজারে আকারের ফল হয়ে থাকে। খোসা পাতলা হয়। এবং অনেক মিষ্টি সাহায্য করতে হয়, সাথে ভিটামিন সি ও পটাশিয়াম সমৃদ্ধ।  
  • রেড স্প্যানিশঃ এ জাতের আনারস মাঝারি আকারের মিষ্টি সাহায্য যুক্ত স্থায়ী রংয়ের হয়। এবং নাতিশীতো জলবায়ু অঞ্চলে চাষ বেশি ভালো হয়। 
  • পরোলাঃ এই জাতের আনারস এর স্বাদ হালকা মিষ্টি, খোসা পাতলা হয় এবং উষ্ণ আবহাওয়া এর চাষ ভালো করা হয়। 
  • ক্যাভিডঃ এ যাদের আনারসের খোসা পাতলা হয় খেয়ে দেয়ে মিষ্টি হয় এবং উষ্ণ আবহাওয়াতে হনন ভালো হয়। 
  • সারাওয়াকঃ এই জাতের বৈশিষ্ট্য উচ্চ মানের মিষ্টি স্বাদযুক্ত প্রশ্ন ও আদ্র অঞ্চলে ভালো ফলন হয়। 
  • রেড কায়েনঃ এই জাতের আনারস তীব্র মিষ্টি স্বাদযুক্ত  হয়ে থাকে । এর খোসা পাতলা হয়ে থাকে এবং উষ্ণ আবহাওয়া অঞ্চলে এর ফলন বেশি হয়।
  • আসামঃ মিষ্টি স্বাদযুক্ত খোসা অনেক শক্ত হয় এবং উষ্ণ ও শুষ্ক অঞ্চলে বেশি ফলন ফলানো সম্ভব হয়। 
  • চায়না আনারসঃ মিষ্টি সাহায্য তো খোসা পাতলা হয় এবং উষ্ণ আবহাওয়া তে চাষ ভালো হয়।
  • গন্ধরাজঃ এ জাতের আনারসের তীব্র গন্ধ হয় এবং মিষ্টি হয়। এ জাতের আনারস উষ্ণ ও শুষ্ক অঞ্চলে চাষ করা হয়।।
  • নিউলুকাসঃ এ জাতের আনারস মিষ্টি সাত যুক্ত খোসা পাতলা হয় এবং উষ্ণ আদ্র অঞ্চলের ভালো ফলন হয়। 
  • পুণের আনারসঃমিষ্টি স্বাদযুক্ত মাঝারে ধরণের খোসা হয় এবং উষ্ণত আবহাওয়ায় চাষ করা হয়।
  • গোল্ডেন আনারসঃ এ জাতের আনারস মিষ্টি ও রসালো হয়ে থাকে। খোসা পাতলা হয়ে থাকে এবং উষ্ণ আবহাওয়া তে চাষ করা হয়। 
  • হাওয়াইয়ান আনারসঃ এ জাতেরা আনারস তীব্র মিষ্টি যুক্ত স্বাদ হয়ে থাকে খোসা অনেক পাতলা হয়। উষ্ণ ও শুষ্ক অঞ্চলে চাষ করা ভালো হয়
  • সুইট নাইটঃ মিষ্টির স্বাদ খোসা পাতলা হয় এবং উষ্ণ ও আগ্রহ অঞ্চলে চাষ করা হয়। 


আনারসের ভালো চারার উচ্চ ফলনের জন্য যেভাবে চাষ করা প্রয়োজন 

আনারস চাষের জন্য কিছু বিশেষ পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয় যাতে উচ্চফলন এবং ভালো মানের ফল পাওয়া যায় ।নিচে সেগুলো ধাপ আকারে দেয়া হলো। 
 ভূমি নির্বাচন ও প্রস্তুতিঃ
আনারসের ভালো চাষের জন্য দোআঁশ মাঠে উপযুক্ত। পিএইচ এর মান ৪.৫- ৫.৫ থাকা উচিত। এবং প্রয়োজনীয় পরিমাণ রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হবে। 

আনারসের চাষে ছারা রোপণ সার ও সেচ ব্যবস্থাপনা

রোপনঃ

আনারসের চারার সঠিক রূপ কোন পদ্ধতি উচ্চ ফলনের জন্য অপরিহার্য। খুব ভালো মানের চারা নির্বাচন করা উচিত। চারা টি অবশ্যই রোগমুক্ত থাকতে হবে । চারা রোপণের সঠিক সময় হল বর্ষাকাল। চারাগুলোর মধ্যে প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার দূরত্ব রাখতে হবে যাতে, গাছ বড় হলে, একটি গাছের সাথে আর একটি গাছ একদম ভিড়ে না যায় তাহলে কোন গাছ রোগ আক্রান্ত হলে তার সাথের গাছেও একই রোগ তাড়াতাড়ি সংক্রমিত হবে।



আনারস মধ্যহীন থেকে মধ্য অগ্রহায়ণ বা অক্টোবর থেকে নভেম্বরের মধ্যে বপন করা হয়। জমি থেকে ১৫ সেন্টিমিটার উঁচু এবং সোয়া ১ মিটার চওড়া বেড তৈরি করতে হবে। এক ব্যাগ থেকে অপর বেড এর মধ্যে ৪০ থেকে ৫০মিটার ফাঁকা রাখতে হবে । দুই সারিতে রোপণ করতে হবে। সারি থেকে সারির দূরত্ব ৫০ সেন্টিমিটার । 

স্যার ও সেচ ব্যবস্থাপনাঃ 

আনারস গাছের যথাযথ বৃদ্ধি এবং উন্নত ফলনের জন্য সঠিক সার ও সেজ ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিমাণে নাইট্রোজেন , ফসফরাস এবং পটাশিয়াম করা। প্রয়োজন অনুযায়ী নিয়মিত শেষ প্রদান করা, বিশেষত শুষ্ক মৌসুমে। 

সারের নাম                                             গাছ প্রতি সার

কম্পোস্ট সার------------------------------- ২৯০ - ৩১০ গ্রাম

ইউরিয়া সার    -------------------------------   ৩০- ৩৬ গ্রাম

টিএসপি সার   ------------------------------     ১০ -১৫ গ্রাম

পটাশ সার       ------------------------------   ২৫ - ৩০ গ্রাম

জিপসাম         ------------------------------     ১০ -১৫ গ্রাম

আনারসের রোগ ও পোকামাকড় দমন

আনারস গাছকে বিভিন্ন রোগ ও পোকামাকড় থেকে রক্ষা করার জন্য সঠিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। গাছের পাতা ও ফলের মধ্যে রোগ দেখা দিলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এক্ষেত্রে বাজারে পাওয়া বিভিন্ন কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে । এছাড়াও পোকামাকড় দমন করার জন্য বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক পাওয়া যায় সেগুলো স্প্রে করে পোকা দমন করা সম্ভব।


 

আনারসের ছাত্ররা পোকা দমনের জন্য িইমিডাক্লো্রোপিড জাতীয় কীটনাশক( যেমন এডমায়ার অথবা টিডো ৭-১০ মিলিটার বা ২মুখ) তোমার ছেলেটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি পাঁচ শতক স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পর পর ২\৩ বার । অসতি স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।  আনারসের পাতা মোড়ানো পোকা দমনে ক্লোর পাইরিফস জাতক কীটনাশক( ডারসবান ২০ইসি বা পাইক্লোরেক্স ২০ ইসি ২০ মিলিলিটার) অথবা ম্যালাথিয়ন জাতীয় কীটনাশক ১০ এটা পানিতে মিশে ১০ দিন পর পর ২-৩ বার বিকেলে করুন। 

রোগবালাইঃ 

  • আনারসের পাতা সাদা দাগ দমনে জিনেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক(যেমন ইন্ডোফিল- জেড- ৭৮-২০ গ্রাম) ১০ এটা পানিতে মিশে স্প্রে করুন। ওষুধ স্প্রে করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করুন। 
  • আনারসের হার্ড রট রোগ দমনে জিনেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক ( যেমন ইন্ডোফিল জেড-৭৮-২০ গ্রাম) ১০ এটা পানিতে মিশে স্প্রে করুন। ওষুধ স্প্রে করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করুন।
সতর্কতাঃ কীটনাশক ব্যবহারের আগে বোতল বা প্যাকেটের গায়ের লেবেল ভালোভাবে পড়ুন এবং নির্দেশনা বলে মেনে চলুন। ব্যবহারের সময় নিরাপত্তা পোষাক পরিধান করুন। ব্যবহারের সময় ধূমপান এবং পানাহার থেকে বিরত থাকুন। কীটনাশক ছিটানো জমির পানি যাতে মুক্ত জল আসে না যেতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। কীটনাশক প্রয়োগ করার জমির ফসল কমপক্ষে ৭ থেকে ১৫ দিন পর বাজারজাত করুন। 
আনারসের ফলনঃ জাত ভেদে শতক প্রতি ফলন ১২৫- ১৮০ কেজি ।
সংগ্রহঃ আনারস সম্পূর্ণ পাকা হলে তা সংগ্রহ করা। আনারসের ফলের মুকুট থাকা অবশ্যক কিন্তু বড় মুকুট রপ্তানির ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করে। ফুল আসার ৬৫ - ৭৫ দিন পর মুকুটের কেন্দ্রীয় মেরিস্টম লোহা তৈরি অগারের সাহায্যে ে অবসারণ করা হলে ফলে বৃদ্ধি না কোন মুকুট ক্ষুধা থাকবে। ভাদ্র মাসে সংগ্রহ করতে হয় আনারস। সাধারণত ফুল ধরার ৪-৫ মাস পড় ফল পাকে. সাধারণত ফলের নিচের দিকে তিন ভাগের এক ভাগ চোখ খুলতে হয়ে আসে তখন তার উপযুক্ত হয়। এতে করে বাজারজাতকরণ করতে সুবিধা হয়।

আনারসের বাজারজাতকরণ

আনারস সংগ্রহের পর এর বাজারজাতকরণ করা জরুরী। বিভিন্নভাবে আনারসের বাজারজাতকরণ করা হয় যেমনঃ
  •    ক্যানিংঃ আনারস ক্যানিং করে রপ্তানি করা হয় । 
  •   রস তৈরিঃ আনারস এর রস, জ্যাম তৈরি করে বাজারজাতকরণ করা হয়। 
এছাড়াও স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা অনুযায়ী বিপণ কৌশল নির্ধারণ করা হয়। এবং আনারসের গুণগত মান বজায় রাখার জন্য ব্রাডিং করা হয়। 

আনারস চাষ একটি লাভজনক উদ্যোগ হতে পারে যদি জাত নির্বাচন উন্নত চার্জ পদ্ধতি এবং সঠিক বাজারজাতকরণ কৌশল অবলম্বন করা হয়। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

SHAMSA2Z নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url