সময়ের সাথে নিজেকে পরিবর্তন

 

সময়ের সাথে নিজেকে পরিবর্তন করা খুবই জরুরি একটি বিষয়। সঠিক মনোবল, ধৈর্য এবং চেষ্টা থাকলে সময়ের সাথে নিজের পরিবর্তন করা আহামরি কোন ব্যাপার নয়। সময়ের সাথে নিজেকে পরিবর্তন না করলে জীবনের বিভিন্ন বাধা বিপত্তি নেমে আসে এবং পথভ্রষ্ট হয়ে যায় আমরা।

সময়ের সাথে নিজেকে পরিবর্তন
সময়ের সাথে নিজেকে পরিবর্তন করতে হলে একটি নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে থাকতে হয়। তাহলে কিছু বাজে অভ্যাস ত্যাগ করতে হয় এবং কিছু ভালো অভ্যাস গ্রহন করতে হয়। সবকিছু মেনে নিয়ে ও ত্যাগ করতে  পারলেই নিজের জীবনে পরিবর্তন সম্ভব। এবং জীবনকে সুন্দর করা সম্ভব।

পোস্ট সূচিপত্রঃ সময়ের সাথে নিজেকে পরিবর্তন

নিজেকে পরিবর্তন করার জন্য কিছু কথা

সময়ের সাথে নিজেকে পরিবর্তন না করলে সময় থেকে চলে যাবে কিন্তু আপনি আপনার পরিবর্তন কখনোই করতে পারবেন না। ফলে সময়ের সাথে আপনি কিছুতে তাল মিলাতে পারবেন না। আর সময়ের সাথে তাল মিলাতে না পারলে আপনি আপনার জীবনে অগ্রসর হতে পারবেন না। আপনি আপনার জীবনে যত তাড়াতাড়ি অগ্রসর হবেন আপনি তত তাড়াতাড়ি আপনার জীবনে ভালো কিছু করতে পারবেন। আপনি আপনার জীবনকে সুন্দর করতে চাইলে অবশ্যই সময়ের সাথে নিজেকে পরিবর্তন করা জরুরী।

সময়ের পরিবর্তন একটি অবিচ্ছেদ প্রক্রিয়া, যা প্রতিনিয়ত আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলছে। সবার সাথে সাথে পরিবর্তন এর প্রয়োজনীয়তা শুধুমাত্র নতুন পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেওয়ার জন্যই নয়, বরং আত্মউন্নয়ের জন্যও অপরেহার্য একটি বিষয়। সময়ের প্রবাহে জীবনের প্রত্যেকটি দিকে প্রবাহিত হয় তাই জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সময়ের সাথে নিজেকে পরিবর্তন এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব হয়। তাই সব কিছুর সাথে তাল মিলিয়ে এবং সময় সাথে তাল মিলিয়ে অবশ্যই নিজের উপরে পরিবর্তন করতে হবে।

পরিবর্তন অবশ্যই আসবে তবে অপেক্ষা করতে হবে। এবং নিজেকে পরিবর্তন করতে হবে অল্প অল্প হবে। একদিনেই কখনো নিজেকে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। পরিবেশ কোন দিকে যাচ্ছে , সময় কোন দিকে আমাকে টানছে সবকিছু খেয়াল রেখে নিজেকে আস্তে আস্তে পরিবর্তন করতে হবে। একটু ধৈর্য ও চেষ্টা করলে নিজেকে পরিবর্তন করা খুবই সহজ।

সময়ের সাথে নিজেকে পরিবর্তন উক্তি

নিজেকে পরিবর্তন করার জন্য নিজেকে ভেতর থেকে উৎসাহিত করার জন্য কিছু উক্তি রয়েছে। যে সকল উক্তিগুলো আপনাকে ভেতর থেকে আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলবে এবং আপনার জীবনকে পরিবর্তন করতে সহজ করে তুলবে। নিজেকে পরিবর্তন করার উক্তি কিছু দেওয়া হলো নিচেঃ

  • আপনি যেই হোন না কেন, আপনি যা করছেন তা কোন ব্যাপার না, আপনি যেখান থেকে এসেছেন তা কোন ব্যাপার নয়, আপনি সব সময় পরিবর্তন করতে পারেন, নিজের একটি ভালো সংস্করণ হয়ে উঠতে পারেন-''ম্যাডোনা''
  • পরিবর্তনের মুহূর্ত একমাত্র কবিতা।- "অ্যাড্রিয়েন রিচ"
  • পরিবর্তন বেদনাদায়ক, কিন্তু আপনার অন্তর্গত নয় এমন জায়গায় আটকে থাকার মত বেদনাদায়ক কিছুই নয়। ম্যান্ডি হেল
  • পরিবর্তন থেকে বোঝার একমাত্র উপায় হলো এটিতে ডুব দেওয়া , এটির সাথে সরানো এবং নাচে যোগদান করা ।"অ্যালান ওয়াটস"
  • সরানো আপনি কে পরিবর্তন করে না। এর শুধুমাত্র আপনার জানালার বাইরের দৃশ্য পরিবর্তন করে"। রাচেল হলিস
  • আপনি দেখতে পাবেন যে জিনিসগুলো ছেড়ে দেওয়া প্রয়োজন; কেবল এই কারণে যে সেগুলো ভারী।"সি. জয়বেল"
  • আপনি কিছু পছন্দ না করেন তবে তা পরিবর্তন করুন। যদি আপনি এটি পরিবর্তন করতে না পারেন তবে আপনার মনোভাব পরিবর্তন করুন। "মায়া অ্যাঞ্জেলা"
  • সব জিনিস সহজ হওয়ার আগে কঠিন। "টমাস ফুলার"
  • বৃদ্ধি এবং আরাম একসাথে থাকে না।" গিন্নি রোমেটি "
  • ভালো জিনিস সময় নেয়।" জন উডেন"
  • সত্য হলো যতক্ষণ না আপনি ছেড়ে দেন, যতক্ষণ না আপনি নিজেকে ক্ষমা করেন, যতক্ষণ না আপনি বুঝতে পারেন যে পরিস্থিতি শেষ হয়ে গেছে , আপনি এগিয়ে যেতে পারবেন না। "স্টিভ মারা বলি"
  • " আপনি বিশ্বের যে পরিবর্তন দেখতে চান তা হও। "মহাত্মা গান্ধী"
  • যারা এমন পাগল যে মনে করে তারা বিশ্বকাপ পরিবর্তন করতে পারে তারাই করে।" স্টিভ জবস"
  • সাহস হলো পরিচিত কে ছেড়ে দেওয়ার শক্তি।" রেমন্ড লিন্ডকুইস্ট"
  • পরিবর্তন আসবে না যদি আমরা অন্য কারো বা অন্য কোন সময়ের জন্য অপেক্ষা করি। আমরা যাদের জন্য অপেক্ষা করছিলাম, আমরাই সে পরিবর্তন যা আমরা চাই।-বারাক ওমাবা"
  • যখন সন্দেহ হয়, পরিবর্তন চয়ন করুন। "লিলি লেউং"

নিজেকে পরিবর্তন করা কঠিন কিন্তু অসম্ভব কিছু না

কোন কাজই খুব সহজ তা কিন্তু নয়। পৃথিবীতে যত কাজ রয়েছে প্রতিটা কাজই কঠিন। কাজকে সহজ করে নিতে হয় বুদ্ধি দিয়ে, মেধা দিয়ে, আত্মবিশ্বাস দিয়ে, শক্তি দিয়ে। তবে নিজেকে পরিবর্তন করা এতটাও কঠিন নয় যে সেটা অসম্ভব কিছু হয়ে যাবে। মনের মধ্যে একটি আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে যা আপনি আপনার জীবন পরিচালন পর্যায়কে পরিবর্তন করবেন। "মানুষ পরিবর্তনশীল" মানুষ সময়ের সাথে সাথে নিজেকে পাল্টাতে পারে এমন একটি কথা রয়েছে এবং কথাটি সত্য এবং যুক্তিযুক্ত।
নিজেকে পরিবর্তন করা কঠিন কিন্তু অসম্ভব কিছু না
আপনার পরিবর্তন হবে আপনার পরিস্থিতি অনুযায়ী। জীবনের সকল পরিস্থিতিতে নিজেকে পরিস্থিতি অনুযায়ী পরিবর্তন করাই হচ্ছে জীবনের আসল পরিবর্তন। আপনাকে লক্ষ্য স্থির রাখতে হবে যে আমি আমার জীবনকে আমার জীবনের দিকে পরিবর্তন করব। তবে একদিনে বা এক মুহূর্ত কখনোই নিজের জীবনকে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। আপনি যে লক্ষ্য স্থির করবেন সেই লক্ষ্যে আস্তে আস্তে আপনাকে অগ্রসর হতে হবে। এবং নিজেকে পরিবর্তন করতে হলে তো একটু সময় লাগবেই।

কোন কাজকে খুব কঠিন মনে করলে সে কাজটি আরো বেশি কঠিন হয়ে উঠবে আপনার জন্য। সেজন্য কোন কঠিন কাজ কেউ সহজ ভাবে ভাবুন। তাহলে দেখবেন একটি অসম্ভব কাজকে সম্ভব করে তুলতে বেশি সময় লাগবে না। এছাড়া আত্মবিশ্বাসের গুরুত্ব অপরিসীম, আপনি নিজেকে পরিবর্তন করতে চান, অথচ আপনার ভিতরে আত্মবিশ্বাস যদি না থাকে তবে আপনি কখনোই নিজেকে পরিবর্তন করতে পারবেন না। নিজেকে পরিবর্তন করতে হলে আত্মবিশ্বাসটা অনেক জরুরী একটি বিষয়।

আপনি সময়ের সাথে নিজেকে পরিবর্তন করতে পারবেন খুব সহজে তবে, আপনার ভেতরে আত্মবিশ্বাস এবং লক্ষ্য স্থির থাকতে হবে। এবং থাকতে হবে , ধৈর্য শক্তি তবে আপনি আপনার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন অর্থাৎ নিজেকে পরিবর্তন করতে পারবেন। তাই আমরা ভুলে থাকি নিজেকে পরিবর্তন করা কঠিন কিন্তু অসম্ভব কিছু না।

আচরণগত এবং ব্যক্তিত্বের বিকাশ পরিবর্তন

আচরণগত পরিবর্তনঃ মানুষের বাহ্যিক প্রকাশভঙ্গি হলো আচরণ। যা তার মানসিক এবং মানসিক অবস্থা প্রতিফলিত করে। সময়ের সাথে সাথে মানুষের আচরণ পরিবর্তন হয় এবং এর ফলে তার জীবনের বিভিন্ন দিক প্রভাবিত হয়। আচরণগত পরিবর্তন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া, যা একজন ব্যাগ থেকে তার সমাজ, পরিবার এবং কর্মক্ষেত্রে আরো কার্যকর এবং সফল করে তোলে। আচরণগত পরিবর্তনের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি তার জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।

আপনি সময়ের সাথে নিজেকে পরিবর্তন করতে হলে আপনার ব্যবহার বা আচরণ পরিবর্তন করতে হবে। আপনি যদি আপনার আচরণ মানুষের সঙ্গে ওঠাবসা করার সময় আগে যেভাবে করতেন আচরণ পরিবর্তন না করেন তাহলে আপনি কোনভাবেই আপনাকে পরিবর্তন করতে পারবেন না। তাই নিজেকে পরিবর্তন করতে হলে অবশ্যই আচরণ পরিবর্তন করতে হবে।

ব্যক্তিত্বের বিকাশঃ ব্যক্তিত্ব হল মানুষের মানসিক ও আচরণগত বৈশিষ্ট্য সমষ্টি। সময়ের সাথে সাথে ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে এবং পরিবর্তন। একজন ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের পরিবর্তনের মাধ্যমে তার জীবনের মান উন্নত হয় এবং সে নতুন নতুন দক্ষতা অর্জন করতে পারে। ব্যক্তিত্বের বিকাশের জন্য পরিবর্তনের প্রয়োজন হয় যে ঠিক কিনা একজন ব্যক্তিকে জীবনযাপনের নতুন নতুন পদ্ধতি শিখায় এবং তার জীবনকে আরো সহজলভ্য করে তোলে। নিজেকে পরিবর্তন করতে হলে ব্যক্তিত্বের বিকাশ পরিবর্তন জরুরী।

বাজে অভ্যাস ত্যাগ করার মাধ্যমে নিজেকে পরিবর্তন

নিজেকে পরিবর্তন করতে হলে আপনার দৈনন্দিন জীবনের যে খারাপ অভ্যাসগুলো রয়েছে সেগুলো অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে। মানুষের দৈনন্দিন জীবনে অনেক বাজে অভ্যাস রয়েছে যেগুলো মানুষের জীবনে, শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এছাড়া আপনার বা আমার এমন কিছু বদভ্যাস রয়েছে যেগুলো পরিবর্তন করতে হবে। তাই আমাদের খারাপ অভ্যাসগুলো বাদ দিয়ে নিজেকে পরিবর্তন করতে হবে। নিচে খারাপ অভ্যাসগুলো সম্পর্কে দেয়া হলোঃ

ত্যাগ কৃত অভ্যাসঃ 
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম না হওয়ার কারণে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং কাজের প্রতি মনোযোগ ও কর্ম ক্ষমতা কমে যায়। এজন্য কর্মব্যস্ততার মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো উচিত সঠিক সময়।
  • ধূমপান ও মদ পান শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ক্যান্সার, লিভার ও ফুসফুস জনিত রোগের সৃষ্টি করে তাই এগুলো থেকে বিরত থাকা।
  • দীর্ঘ সময় ধরে টিভি দেখা, মোবাইল ফোন বা কম্পিউটার স্ক্রিনের সময় কাটানো থেকে বিরত থাকুন।
  • কখনোই দেরি করে ঘুমাতে যাবেন না। সঠিক সময়ে ঘুমানোর চেষ্টা করবেন। রাতে ঘুমানোর সঠিক সময় রাত ৯টা থেকে ভোর ৩ টা।
  • নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
  • সঠিকভাবে না বসা বা দাঁড়ানোর অভ্যাস গুলো ত্যাগ করুন। এবং সঠিকভাবে চলুন।
  • দুশ্চিন্তা ও মানসিক চিন্তা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।
  • অতিরিক্ত ব্যয় থেকে দূরে রাখুন নিজেকে।

পেশাগত পরিবর্তন করুন

কর্মজীবনে পরিবর্তনঃ এসাগত জীবন হলো জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। যা মানুষের জীবনের মান নির্ধারণ করে। সময়ের সাথে সাথে পেশাগত জীবনে পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়। কারণ পেশাগত ক্ষেত্রেও নতুন নতুন প্রযুক্তি এবং পদ্ধতি যোগ হয়। ক্যারিয়ারের উন্নতির জন্য পরিবর্তন করা অপরিহার্য । পেশাগত জীবনে নতুন দক্ষতা অর্জন,নতুন কাজের ধরন শেখা এবং নতুন পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেওয়া পরিবর্তন এর মাধ্যমে সম্ভব হয়। পেশাগত পরিবর্তনের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে।

কাজের ধরন পরিবর্তনঃ সময়ের সাথে সাথে কাজের ধরনের পরিবর্তন ঘটে। আগে যেখানে ম্যানুয়াল কাজ বেশি ছিল, এখন সেখানে প্রযুক্তি এবং স্বয়ংক্রিয়তার ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। কাজে ধরনের পরিবর্তনের ফলে কাজের গুনগত মান বৃদ্ধি পায়। এবং কাজের প্রক্রিয়া সহজ হয়। কাজের ধরনের পরিবর্তনের প্রভাব পড়ে কর্মজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, যা একজন কর্মীকে আরো কার্যকর এবং সফল করে তোলে। কাজের ধরনের পরিবর্তন এর ফলে একজন কর্মী সফলতা সাথে তার ক্যারিয়ারের উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে।

সব ধরনের পরিবর্তনের মধ্যে পেশাগত পরিবর্তন ও অন্যতম। নিজেকে পরিবর্তন করতে হলে সব ধরনের পরিবর্তন প্রয়োজন।

সামাজিকভাবে নিজেকে পরিবর্তন করুন

সামাজিক পরিবর্তন ও সম্পর্কঃ সমাজ হলো মানুষের সমষ্টি, যেখানে প্রতিটি ব্যক্তি একে অপরের সাথে সম্পর্কিত থাকে। সময়ের সাথে সাথে সামাজিক সম্পর্কের পরিবর্তন ঘটে। সমাজের পরিবর্তন ব্যক্তি এবং পরিবারের উপর প্রভাব ফেলে। সামাজিক পরিবর্তনের ফলে নতুন নতুন সামাজিক নিয়ম এবং সংস্কৃতির উদ্ভব ঘটে। যা সমাজের উন্নয়নের সহায়ক হয়। সামাজিক সম্পর্কের পরিবর্তন একজন ব্যক্তিকে তার সামাজিক অবস্থানকে আরো উন্নত করতে সাহায্য করে। এবং সমাজের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে সক্ষম করে।

সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধিঃ যেসব ব্যক্তি সামাজিক পরিবর্তনের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেন। তাদের প্রতি সমাজের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়। তারা সমাজের সম্মান ও মর্যাদা অর্জন করেন এবং অন্যদের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে ওঠে। তাই সামাজিকভাবে নিজেকে পরিবর্তন করা খুবই প্রয়োজন। সামাজিকভাবে নিজেকে পরিবর্তন করা শুধুমাত্র ব্যক্তি বিশ্বাসের জন্য নয়, বরং পুরো সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই সমাজের সাথে তাল মিলিয়ে নিজেকে পরিবর্তন করতে পারলে জীবন সুন্দর হবে।


সামাজিক পরিবর্তনের সাথে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি হওয়া আচরণের পরিবর্তন আনলে পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ক আর মজবুত হবে। একে অপরের সম্মান ও বোঝাপড়া এবং সহানুভূতি বৃদ্ধি পায়।

নিজেকে পরিবর্তন করতে হবে

নিজেকে পরিবর্তন করতে হবে এই মনোবল দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। নিজেকে পরিবর্তন করার জন্য কিছু উপদেশ বা জ্ঞান আহরণ করুন। স্থান কাল পাত্র ভেদে নিজেকে পরিবর্তন করে নিন। তবে অনেকেই বুঝতে পারে না জীবনে সফলতা অর্জন করতে হলে কিভাবে নিজেকে পরিবর্তন করতে হয়। এক্ষেত্রে সর্বোত্তম কিছু কাজ রয়েছে, এবং নিয়মাবলী রয়েছে যেগুলো মেনে চললে নিজেকে পরিবর্তন করাটা খুবই সহজ হয়ে ওঠবে। নিচে সেগুলো দেওয়া হল-
নিজেকে পরিবর্তন করতে হবে

  • সব সময় কথা কম বলবেন এবং অন্যের কথা শুনবেন বেশি। আমরা সাধারণত কথা বেশিভ বলে থাকি, যেটি মোটেও ভালো নাই তাই সব সময় কম কথা বলার চেষ্টা করতে হবে। এবং যেখানে ভালো কথা হচ্ছে সেখানে অন্যের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে।
  • কাজ করবেন বেশি এবং অন্যের কাজ দেখবেন কম। আমরা কাজ করি ঠিকই কিন্তু নিজের কাজের থেকে অন্যের কাজের গুরুত্ব বেশি দেই। আমি দিনে কতটুকু কাজ করলাম কি করলাম না এটা না দেখে অন্যের কাজের দিকে বেশি খেয়াল থাকে। তাই অন্যের কাজের দিকে না দেখে নিজের কাজের দিকে দেখা উচিত এবং মনোযোগ সহকারে কাজ করা উচিত।
  • অন্যকে সম্মান করুন এবং নিজেকে কখনোই অন্যের থেকে বড় মনে করবেন না। কারণ আত্ম অহংকার একটি জঘন্যতম কাজ। যে অহংকার নিয়ে চলে সে কখনোই জীবনে বড় হতে পারে না। আর অহংকারী মানুষগুলোকে সবাই সব সময় ঘৃণা চোখে দেখে। 
  • নিজের দোষ দেখবেন এবং অন্যের গুণগুলোকে দেখবেন। আমরা নিজের দোষ না দেখে অন্যের দোষ দেখে বেড়াই। তাই জ্ঞানীগণেরা বলেন নিজের দোষ গুলোকে দেখতে এবং অন্যের গুন গুলো দেখতে। যাতে করে নিজের মধ্যে পরিবর্তন নিয়ে আসা যায়।

নিজেকে পরিবর্তনের গুরুত্ব

নিজেকে পরিবর্তন করার গুরুত্ব অপরিসীম। সবার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে নিজেকে পরিবর্তন করতেই হবে। বর্তমান বিশ্ব দ্রুতগতিতে পরিবর্তন হচ্ছে। এই পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নিয়ে চলতে হলে আমাদের নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তার মধ্যে দুটি পদক্ষেপ হলোঃ ১. মানিয়ে নেওয়া,২. সৃজনশীলতা

মানিয়ে নেওয়াঃ আপনি যদি নিজেকে পরিবর্তন করতে পারেন ফলে নিজেকে পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে পারবেন খুব দ্রুত। জীবনে অনেক সময় অনেক ধরনের সমস্যা এবং প্রতিকূলতা আসতে পারে। সে সব সমস্যাই পিছুটান না দিয়ে মানে নিতে পারলেই নিজেকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন। সব পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতায় হচ্ছে এক অন্যরকম পরিবর্তন।

সৃজনশীলতাঃ বর্তমান যুগে এমন একটি পরিস্থিতি এসেছে যেখানে লেখাপড়া থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রে সৃজনশীলতা। আপনি নিজেকে পরিবর্তন করতে চাইলে আপনার ভেতরে সৃজনশীলতা থাকতে হবে। সৃজনশীলতা তৈরি করতে হবে। তবে পরিবর্তন হয়ে গেলে পরিবর্তন আপনাকে নতুন ভাবে চিন্তা করতে এবং সৃজনশীল হতে সাহায্য করে। নিজেকে নতুন পথে পরিচালিত করার মাধ্যমে আপনি সৃজনশীলতা বাড়িয়ে তুলতে পারবেন। যা কর্মজীবনে ও ব্যক্তিগত জীবনে নতুন আইডিয়া ও সমাধান বের করার সুযোগ করে দেয়।

প্রযুক্তিগত ভাবে নিজেকে পরিবর্তন করুন

প্রযুক্তিগত ভাবে নিজেকে পরিবর্তন করা মানে এই আধুনিক যুগে প্রযুক্তিকে ভালোভাবে জানা এবং প্রযুক্তি ব্যবহারের দক্ষতা অর্জন করা। আধুনিক যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন সফটওয়্যার, বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, বিভিন্ন মেশিনের দক্ষতা অর্জন করা। বর্তমানে অনেকে রয়েছেন যারা প্রযুক্তিগত বিষয়ে তেমন কোন অভিজ্ঞ নয়। যেহেতু তারা প্রযুক্তি বিষয়ে অভিজ্ঞ নন তাই তারা অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে। বর্তমানে প্রযুক্তিগতভাবে এখন প্রায় সব কাজ হয় তাই প্রযুক্তিগতভাবে।


তাই নিজেকে পরিবর্তন করতে হলে প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে হবেব, সাথে প্রযুক্তি ব্যবহারের কৌশল জানতে হবে। নিচে কিছু প্রযুক্তিগত বিষয় দেয়া হলো যেগুলো জানলে আপনি প্রযুক্তিগত ভাবে নিজেকে পরিবর্তন করতে পারবেন।
  1. নতুন প্রযুক্তি লেখা।
  2. কোডিং এবং প্রোগ্রামিং শেখা।
  3. সাইবার নিরাপত্তায় জ্ঞান অর্জন করা।
  4. ডিজিটাল দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে।
  5. ক্লাউড টেকনোলজি।
  6. নেটওয়ার্কিং এবং সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে হবে।
  7. অনুপ্রাণিত থাকতে হবে এবং ক্রমাগত শিখতে হবে।

লেখক এর মন্তব্যে সময়ের সাথে নিজের পরিবর্তন

সময়ের সাথে নিজেকে পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা নিরন্তর। যুগের পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলা মানে কেবল বাহ্যিক পরিবর্তন নয় অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনও বটে। যুগের পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলা মানে চিন্তা ভাবনা, খারাপ অভ্যাস এবং মানসিকতা সহ সবকিছুর পরিবর্তন। যেকোনো নতুন পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়াতে পারা আমাদের সক্ষমতা ও মানসিক স্থিতিশীলতা বাড়ায়। এবং আমাদের সৃজনশীল ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। বর্তমানে আধুনিক যুগ হওয়ায় নিজেদের পরিবর্তন করা আবশ্যক।

তবে নিজেকে পরিবর্তন করা খুবই কঠিন ব্যাপার তা কিন্তু নয়। আপনি চাইলেই চেষ্টা করলেই খুব সহজে নিজেকে পরিবর্তন করতে পারবেন কিছুদিনের মধ্যেই। মনের মধ্যে এক ধরনের লক্ষ্য থাকতে হবে এবং যে লক্ষ্যকে আপনি স্থির করবেন সে লক্ষ্য যতক্ষণ না আপনি সফলতা অর্জন করতে পারছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত হাল ছাড়লে চলবে না। কোন কিছুই আসলে খুব তাড়াতাড়ি সম্ভব নয় এবং নিজের বাজে অভ্যাসগুলো আস্তে আস্তে পরিবর্তন করতে থাকুন। নিজেকে পরিবর্তন করা কঠিন হলে অসম্ভব কিছু না।

একটি রুটিন করে নেবেন এবং সেই রুটিনটি সব সময় মেনে চলার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন। যদি একটি রুটিন তৈরি করে সেটি না মেনে চলেন তাহলে কখনোই আপনি আপনার লক্ষ্যে বোঝাতে পারবেন না। প্রতিদিন একটি হলেও ভাল কাজ করার চেষ্টা করবেন। আপনি চাইলে কিছু তাহার তৈরি করতে পারেন সে ধাপগুলো একটি একটি করে পার করবেন এবং নিজেকে পরিবর্তন করবেন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

SHAMSA2Z নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url