মাতা পিতার প্রতি কর্তব্য রচনা
মাতা পিতার প্রতি কর্তব্য রচনা সম্পর্কে আমাদের আজকের আলোচনা। শুধুমাত্র পরীক্ষার খাতায় লিখব বলে আমরা পিতা-মাতার প্রতি কর্তব্য এই রচনা সম্পর্কে জানব তা নয়। বাস্তব জীবনে কিভাবে এই কর্তব্য গুলো সুন্দরভাবে পালন করব তার সম্পর্কেও জানব।
আমাদের সৃষ্টিকর্তার পরে আমাদের মা বাবার স্থান। তাই তাদের প্রতি আমাদের যে দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে তা সম্পর্কে আমাদের অবশ্যই জানা উচিত। কেমন ব্যবহার করা উচিত, কি করলে তারা কষ্ট পাবে না এবং তাদের প্রতি আমাদের কি দায়িত্ব সে সম্পর্কে আজকে চলুন আলোচনা করি।
পোস্ট সূচিপত্রঃ মাতা পিতার প্রতি কর্তব্য রচনা
ভূমিকা
স্রষ্টার সৃষ্টিশীল এই জগতে স্রষ্টার পরে পিতা মাতারই আমাদের সৃষ্টির উৎস।
বাস্তব জীবনে পিতা মাতায় আমাদের অস্তিত্ব দান করেন। তারা আমাদের লালন পালন করেন।
তাদের আদর স্নেহের আমরা বড় হয়ে উঠেছি। পিতা-মাতা যেমন আমাদের প্রতি অনেক
দায়িত্ব পালন করেন তেমনি পিতা মাতার প্রতি আমাদেরও অনেক দায়িত্ব-কর্তব্য
রয়েছে। পিতা মাতা সন্তানের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তাদের অসীম
ত্যাগ মমতা এবং ভালোবাসার বিনিয়ময় সন্তানের জন্ম ও লালন পালন হয়।
পিতা মাতা সন্তানের জন্য সবকিছু ত্যাগ করতে প্রস্তুত থাকেন এমনকি নিজের সুখ
স্বাচ্ছন্দ বিসর্জন করে দেন। আমাদের প্রতি তাদের এত ভালবাসা ও যত্নের প্রতিদানে
আমাদেরও পিতা-মাতার প্রতি কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে, যেগুলো আমাদের
সঠিকভাবে পালন করা উচিত।
পিতা মাতার প্রতি ব্যবহার
আমাদের প্রধান দায়িত্ব হলো পিতা-মাতার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা। তাদের সঙ্গে কোন
অবস্থাতেই দূর ব্যবহার করা উচিত নয়। তাদের সঙ্গে সব সময় নম্র আচরণ করতে হবে।
এমন কোন ব্যবহার পিতা-মাতার সাথে করা যাবে না যাতে তারা মনঃক্ষুন্ন হন। তাদের
সাথে এমন ব্যবহার করতে হবে যে ব্যবহার পেলে আমাদের প্রতি তাদের
ভালোবাসা আরো বৃদ্ধি পায়। তারা সন্তানকে শাসন করার জন্য কোন কোন সময় কথা ও
কঠোর আচরণ করলেও তার সন্তানের মঙ্গলের জন্যই করে থাকেন।
আরো পড়ূনঃ আমার জীবনের লক্ষ্য রচনা
পিতা মাতার শাসনের আড়ালে ভালোবাসা থাকে। তাদের মত এমন অকৃত্রিম শুভাকাঙ্ক্ষী
দ্বিতীয় আর নাই। সন্তানের উচিত পিতা-মাতার সাথে ভালো ব্যবহার করে তাদের সম্মানিত
করা, তাদের আবেগ অনুভূতিকে মূল্যায়ন করা। পিতা-মাতা সন্তানের মুখ দেখলেই মনের
অবস্থা বুঝতে পারেন। চোখের আড়ালে থাকলেও সন্তানের কোন অমঙ্গল হলে তারা ঠিকই
বুঝতে পারেন। সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার মায়া মমতা অনুভূতি দায়িত্ব এই সবই
সন্তানকে যাবতীয় বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করে থাকে ।
সন্তানের কাছে তারা বটবৃক্ষের মতো। বটবৃক্ষের মতো ছায়া দ্বারা সন্তানকে
শান্তিপূর্ণ জীবন কাটাতে সহযোগিতা করেন তারা। সন্তানের উচিত পিতা মাতার ভালবাসাকে
মায়া মমতাকে মর্যাদাপূর্ণ ও অর্থবহ করতে তাদের প্রতি ভালো ব্যবহার করা, নম্বর
আচরণ করা। নম্র আচরণের মাধ্যমে সন্তান তার পিতা মাতার মনে যেমন শান্তি দিতে পারে
তেমনি সে নিজেও তাদের নির্ভর সম্পর্কের বন্ধনে জীবনকে সুখ স্বাচ্ছন্দে কানায়
কানায় ভরে তুলতে পারে। যেটা আমরা মাতা পিতার প্রতি কর্তব্য রচনা তে
দেখি।
ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা
মাতা পিতার প্রতি কর্তব্য রচনা দেন আমরা বিশ্লেষণ করলে দেখি, পিতা-মাতা যেমন
আমাদের সমস্ত দায়িত্ব নিয়ে লালন পালন করে বড় করে তোলেন তেমনি আমাদের উচিত পিতা
মাতার ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা। তারা যখন অসহায় হয়ে পড়েন অর্থাৎ যখন তাদের কাজ
করার কোন ক্ষমতা থাকে না তখন তাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব সন্তানের নেওয়া অবশ্যই
উচিত। নিজেরা যা খাবে তাদেরও তাই খেতে দিতে হবে। এমনকি তাদের জন্য মাঝে মাঝে
আলাদা খাদ্যের ব্যবস্থা করতে হবে।
রোগ শোক হলে সেবা যত্ন অবশ্যই করতে হবে এবং ওষুধপত্রের ব্যবস্থা করতে হবে। তারা
যেন কোন দিক দিয়ে মনে কষ্ট না পায় সে ব্যবস্থা করতে হবে। যারা অসহায় মাতা
পিতার প্রতি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করে না তারা মানুষ রূপে শয়তান। তারা সমাজের চোখে
শয়তানের থেকেও নিকৃষ্ট।
বৃদ্ধ কালীন পরিচর্যা
সন্তানের উচিত বৃদ্ধকালের পিতা-মাতার উপযুক্ত পরিচয় যার ব্যবস্থা করা।মাতা পিতার
প্রতি কর্তব্য রচনা থেকে আমরা দেখি যে বৃদ্ধকালের সময় কিভাবে পিতা মাতার
পরিচর্যা করতে হয়। বৃদ্ধকালে পিতা-মাতা অত্যন্ত অসহায় হয়ে পড়েন। এই সময়
তাদের কাজের ক্ষমতা থাকে না, এমনকি চলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। তাই টি
সন্তানের উচিত এ সময় তাদের পাশে থাকা এবং তাদের প্রতি কাজে সর্বাত্মক সহযোগিতা
করা। তবেই মা-বাবা থেকে দোয়া পাওয়া সম্ভব।
সন্তানের মনে রাখা উচিত একদিন সে নিজেও পিতা হবে এবং বৃদ্ধ হবে। সে তার
পিতা-মাতার জন্য যতটুকু করবে তার সন্তান তার জন্য ততটুকুই করবে। কারণ তার সন্তান
তার কাছ থেকে দেখে এসব শিখবে। পিতা-মাতা বয়সের বৃদ্ধ হলেও সন্তানকে মনে রাখতে
হবে যে পিতা মাতার কারণে সে তার জীবন লাভ করেছে, জীবন পরিচালনার উপায় এবং
পথ পেয়েছে।
অবাধ্য না হওয়া
মাতা পিতার প্রতি কর্তব্য রচনা থেকে আমরা এই শিক্ষা নিব যেন মাতা পিতার প্রতি
অবাধ্য আমরা কখনোই না হই। কোনভাবে পিতা মাতার অবাধ্য হওয়া উচিত নয়। পিতা-মাতা
যা বলে তা শুনতে হবে অবশ্যই শুনতে হবে। তারা যেটা করতে নিষেধ করে সেটা না করায়
ভালো। কারণ পিতা-মাতা ভালো জানেন সন্তানের জন্য কোনটি মঙ্গল জনক। এমন কোন
পিতা-মাতা নেই যারা সন্তানের অমঙ্গল চান। হযরত বাইজিদ বোস্তামী গেছেন মাতৃসেবার
এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
আরো পড়ূনঃ কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনা
হযরত বাইজিদ বোস্তামীর মা ঘুম থেকে জেগে পানি চেয়েছিলেন। খুলসিতে পানি নাই দেখে
তিনি রাত দুপুরে চলে যান ঝর্ণা থেকে পানি আনতে। এসে দেখেন মা আবার ঘুমিয়ে
পড়েছেন। ঘুম থেকে জাগালে তিনি কষ্ট পাবেন ভেবে হযরত বাইজিত বোস্তামী মাকে ডাকলেন
না। মা জাগার পর দেখলেন হযরত বায়েজিদ বোস্তামী পানি হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। এ
অবস্থায় দেখে হযরত বায়েজিদ বোস্তামীর মা তার জন্য প্রাণ খুলে দোয়া করেছিলেন।
প্রকৃতপক্ষে তিনি মাতা পিতার প্রতি কর্তব্যের এক উজ্জ্বল নজির রেখে গেছেন।
বিভিন্ন ধর্মের আলোকে
পবিত্র হাদীসে উল্লেখ আছে যে, পিতা-মাতার পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্ত। তাই পিতা
মাতায় আমাদের পরকালের একমাত্র মুক্তির উপায়। সবার আগে পিতা মাতার দোয়া কাজে
লাগে। শুধু ইসলাম ধর্মেই নয় পৃথিবীর সকল ধর্মের পিতা-মাতার স্থান সর্বোচ্চ দেয়া
হয়েছে। তাই আমরা এমন কিছু করবো না যে কাজে পিতা-মাতা অসন্তুষ্ট হন। পিতা-মাতা
সন্তুষ্টির মাধ্যমে আমাদের ইহ লৌকিক ও পরলৌকিক মুক্তি সম্ভব। হাদিসে বলা হয়েছে
যে, সন্তানের পিঠের চামড়া দিয়ে জুতা তৈরি করলেও মা-বাবার ঋণ শোধ হবে না।
মৃত্যুর পরের কর্তব্য
পিতা মাতার মৃত্যুর পর তাদের প্রতি সন্তানের অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য থেকে যায়।
তাদের মৃত্যুর পর প্রত্যেক সন্তানের উচিত তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করা।
সন্তান যদি পিতা-মাতার কবরস্থানে গিয়ে দোয়া করে তাহলে আল্লাহ সে দোয়া
কবুল করেন। পিতা-মাতা ঋণগ্রস্ত থাকলে সন্তানের তাপ পরিশোধ করা উচিত।
অন্ততপক্ষে প্রতিদিন ফজরের নামাজ আদায় করে পিতা মাতার কবরস্থানে গিয়ে তাদের
জন্য দোয়া করা তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করা উচিত।
তাদের মৃত্যুর পরে তাদের উদ্দেশ্যে দান খয়রাত করা। আসলে পিতা-মাতার মৃত্যু হলেও
তাদের প্রতি সন্তানের দায়িত্ব শেষ হয় না। পিতা-মাতার মৃত্যুর পর তাদের
আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধুদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং তাদের খোঁজখবর নেওয়া
সন্তানের দায়িত্ব। এটি পিতা-মাতার প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার প্রতীক এবং তাদের
স্মৃতিকে সম্মান জানানোর একটি উপায়।
উপসংহার
মাতা পিতার প্রতি কর্তব্য রচনা থেকে আমরা অনেক বিষয়ে জানতে পারলাম। পিতা মাতার
প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য লিখে শেষ করা আসলে সম্ভব নয়। পিতা-মাতা ছাড়া
যেমন আমাদের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না তেমনি তাদের প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্য
পালন ছাড়া আমাদের ইহলোকিক ও পরলৌকিকমুক্তি ভাবা যায় না। আমাদের বায়েজিদ
বোস্তামীর মত পিতা-মাতাকে সেবা করা নজির সৃষ্টি করতে হবে। নইলে আর কেমন মাতৃ সেবা
করলাম আমরা।
পিতা-মাতা আমাদের জীবনের মূল ভিত্তি। তাদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব কর্তব্য পালন
করতে ব্যর্থ হলে আমাদের মানসিকতা এবং নৈতিকতা হারিয়ে ফেলি। সন্তানের
দায়িত্ব হলো পিতা মাতার প্রতি চিরন্তন কৃতজ্ঞতা সম্মান এবং ভালোবাসা দেখানো।
তাদের সময় পাশে থাকা এবং সব সময় তাদের সুখ শান্তি নিশ্চিত করা।
লেখকের শেষ কথায় মাতা পিতার প্রতি কর্তব্য রচনা
যাদের মা-বাবা এখনো জীবিত আছেন তাদের সেবায় সব সময় মগ্ন থাকা। আমাদের শেষ
নবী বলে গেছেন মাতা পিতার প্রতি সবসময় সুন্দর ব্যবহার করা এবং সব সময়
তাদের সেবায় নিয়োজিত থাকা। সে তো সৌভাগ্যবান যার পিতামাতা এখনো জীবিত আছে
এবং সেবা করতে পারছেন। আমরা এই রচনা থেকে অনেক কিছু জানতে পারলাম এবং পরীক্ষার
খাতায় লেখার মত একটি সুন্দর রচনা পেলাম। আপনার ভাল লাগলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের
সাথে শেয়ার করবেন।
SHAMSA2Z নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url