আমার জীবনের লক্ষ্য রচনা
আমার জীবনের লক্ষ্য রচনা থেকে আমরা সম্পূর্ণ বুঝতে পারবো যে আমাদের জীবনের লক্ষ্য কিভাবে নির্ধারণ করব, আমাদের জীবনের লক্ষ্য কেমন হওয়া উচিত এর সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারব। অনেক সময় বিভিন্ন পরীক্ষাতে রচনাটি এসে থাকে।
তখন আমরা বুঝতে পারি না যে কিভাবে লিখব। তাই আপনাদের সুবিধা অনুযায়ী একটি
সহজভাবে আমার জীবনের লক্ষ্য এই রচনাটি নিচে সুন্দর হবে লিখে দেওয়া হলো। এই
রচনা থেকে শুধু পরীক্ষার জন্যই নয় আমরা অনেক কিছু জানতে পারবো। চলুন তাহলে
জেনে নেওয়া যাক।
পোস্ট সূচীপত্রঃ আমার জীবনের লক্ষ্য রচনা
- ভূমিকা
- জীবনের লক্ষ্য স্থির করার প্রয়োজনীয়তা
- আমার জীবনের লক্ষ্য
- এরকম লক্ষ্য স্থির করার কারণ
- দেশের অবস্থা সঙ্গে আমার লক্ষ্যের যোগ সূত্র
- সতর্কতা অবলম্বন
- উপসংহার
- লেখকের মন্তব্যে আমার জীবনের লক্ষ্য রচনা
ভূমিকা
শৈশব বা কৈশোর কালে আমরা ভবিষ্যত জীবন নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখে থাকি। কিন্তু সবার
স সব স্বপ্ন সব সময় সত্য হয় না। সকলেই জীবনে সফলতা অর্জন করতে পারে না। তবুও
বড় হওয়ার জন্য সব মানুষের স্বপ্ন থাকে এবং থাকা খুবই দরকার। শৈশব থেকে জীবনের
একটি লক্ষ্য স্থির করা উচিত। শৈশব থেকে একটি লক্ষ্য স্থির না করলে সেই
লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। মহা সমুদ্রের নাবিক ধ্রুব নক্ষত্রে লক্ষ্য স্থির
রেখে অকুল সমুদ্র বক্ষের দিক নির্ণয় করতে পারে।
আরো পড়ূনঃ দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা
ফলে সে দিকভ্রষ্ট হয়ে অজানা উপকূলে নিরুদ্দেশ হয় না। তেমনি শৈশবেই জীবনের
লক্ষ্য স্থির করে, সেই লক্ষ্যকে জীবনে ধ্রুবতারা করে জীবন সমুদ্রে পাড়ি দিলে,
বিভ্রষ্ট হয়ে বিপথগামী হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। ছাত্র অবস্থায় লক্ষ নির্ণয়ের
যথার্থ সময়, ছাত্র জীবন পরিণত জীবনের প্রস্তুতি পর্ব। ছাত্র অবস্থায় স্বপ্ন ও
কল্পনা পরিণত জীবনে বাস্তবের মাটিতে ফুলে ফুলে সুশভিত হয়। কিন্তু স্বপ্ন
কেবল স্বপ্ন হলে কিংবা কল্পনা অবাস্তব ও উদ্ভট হলেই চলে না।
শেষ স্বপ্ন পরিণত জীবনের লক্ষ্য বাহি হওয়া চাই। সে জন্য ছাত্র অবস্থাতেই জীবনের
লক্ষ্য স্থির করতে হয়। ছাত্র অবস্থায় লক্ষ্য স্থির না করলে পরে গিয়ে আর লক্ষ্য
স্থির করা যায় না। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে অগ্রসর হতে হয় শ্রম, নিষ্ঠা,
অধ্যাবসায় এবং একাগ্রতা নিয়ে।
জীবনের লক্ষ্য স্থির করার প্রয়োজনীয়তা
আমার জীবনের লক্ষ্য রচনা তে জীবনের সার্থকতা লাভ করতে হলে একটি দৃঢ় সংকল্প
চাই। কবি
বলেছেন -
মন রে কৃষি কাজ জানো না,
এ মানবজমিন রইল
পতিত
আবাদ করলে ফলতো
সোনা।
মানব জমিনে সোনা ফলাতে হবে। এজন্য যথাসময়ে বীজ ভবন এবং আনুষঙ্গিক পরিশ্রম ও তার
পরিচর্যা দরকার। তেমনি জীবনের স্বপ্নকে সার্থক করে তুলতে হলে প্রয়োজন সাধনা এবং
প্রয়োজন একাগ্রতা। জীবনে দুর্বলকে উপনীত হওয়ার পথে অনেক বাধা এবং
অনেক বিঘ্ন এগুলো থাকবেই। তাই বলে হতাশ হওয়া চলবে না। কিন্তু তাতে পশ্চাৎপদ
না হয়ে সম্মুখের স্থির লক্ষাভীমুখে অগ্রসর হয়ে চলতে হবে। তাই জীবনের চলার পথে
চাই নির্দিষ্ট এবং সুপরিকল্পিত পথরেখা।
আর সেই পথ দেখায় একজন মানুষকে সফলতার তরনে উপনীত করবে। সেজন্যই জীবনের সূচনাদের
লক্ষ্য স্থির রাখা উচিত। এবং জীবনের লক্ষ্য স্থির একটি করতে হবে বারবার লক্ষ্য
স্থির পাল্টানো যাবে না। তাহলে সে ব্যক্তি তার কোন লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম
হবে না। আমার জীবনের লক্ষ্য রচনা খুঁজলে আমরা এটাই পাই।
আমার জীবনের লক্ষ্য
কোন রকম কোন লক্ষ্যকে কেন্দ্র করেই মানবজীবন আবর্তিত। আমার জীবনের লক্ষ্য আমি
একজন সদক্ষ কৃষক হব। আমার লক্ষ্য যেন অনেকে হয়তো আমাকে উপহাস করবে।
কিন্তু আমার জীবনের স্থির লক্ষ্য হলো কৃষক হওয়া। আমার লক্ষ্যকে অনেকে সামান্য
এবং দীন মনে করতে পারে। যারা এরকম মনে করে আমি তাদের দোষ দেই না। কারণ দোষ
তাদের নয় দোষ সামাজিক দৃষ্টি ভঙ্গির, সংকীর্ণতার। সমাজের দৃষ্টিতে কৃষক
হওয়াকে এখন অন্যরকম দৃষ্টিতে দেখে মানুষ।
কৃষক বললে সবাই আমাদের দেশের গতানুগতিক ধারার মানধাতা আমলের
সেই কৃষক, যাদের শিক্ষা নেই, স্বাস্থ্য নেই, দুবেলা পেট ভরে খাওয়ার সংস্থান
নেই, তাদের কথা ভেবে থাকে সবাই। কিন্তু আমার জীবনের লক্ষ্য রচনা তে আমি
সেরকম কৃষক হতে চাই না। আমি আধুনিক যুগের শিক্ষিত, সুদক্ষ এবং বিজ্ঞান
নির্ভর প্রগতিশীল কৃষক হতে চাই। শুধু যে পড়াশোনা করে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত
হয়ে মানুষ চাকরি করবে এমনটা তো সবসময় হতে পারে না।
আর এখন আমাদের দেশে চাকরির হার অনেক কম শতকরা কম মানুষ এখন চাকরি পাচ্ছে।
কিন্তু উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও একজন সুদক্ষ কৃষক হতে পারেন সেটা কি কখনো
কেউ ভেবে দেখেছেন। একটি চাষা কৃষকের থেকে একজন শিক্ষিত কৃষক বরাবর বেশি ফসল
ফলাতে পারবে। তাই আমি আমার জীবনের মূল লক্ষণ নির্ধারণ করেছে আমি কৃষক হব।
এরকম লক্ষ্য স্থির করার কারণ
আমার জীবনের লক্ষ্য রচনা তে আমি যে কেন এই লক্ষণ নির্ধারণ করেছি তার কিছু কারণ
রয়েছে। আসলে বন্ধু মহলের কেউ হতে চায় ডাক্তার, কেউ হতে চায় ইঞ্জিনিয়ার, কেউবা
ম্যাজিস্ট্রেট, আবার কেউ হতে চায় অর্থনীতিবিদ। সকলে চাকরিকেই জীবনের লক্ষ্য রূপে
স্থির করেছে। বাংলাদেশে এ চাকরি প্রিয়তা এত বৃদ্ধি পেয়েছে যে এর ফলে
ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে কৃষি সহ সৃষ্টি শিল্পের প্রতি এক ধরনের বিমুখতা দেখা
দিয়েছে।
যে কৃষি আমাদের দেশে অর্থনীতির মূল উৎস এবং যে কৃষি নানা উপায়ে আমাদের দেশের লোক
সংখ্যার অধিকাংশের জীবিকার আয়োজন করে দেয়, তার পরিচালনার দায়িত্ব মুষ্টিময়
নিরক্ষর, রুগ্ন, পরিবর্তন বিভাগ দরিদ্র কৃষকের হাতে তুলে দিয়ে আমরা নিশ্চিন্তে
বসে আছি। এটা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়। আমাদের শিক্ষক যুবসমাজে কেউ কি এই মাটির
ডাকে সাড়া দেবে না?
আমাদের কবি বলেছেন- "ফিরে চল ফিরে চল মাটির টানে"
দেশের অবস্থা সঙ্গে আমার লক্ষ্যের যোগ সূত্র
আজ আমাদের শিল্প বিধ্বস্ত, কৃষি অত্যন্ত দুর্দশা গ্রস্থ। দিনের পর দিন শুভ হোক
শাসকেরা এ দেশকে লুটেপুটে খাচ্ছে। অথচ স্বাধীনতা লাভের পর আমাদের লক্ষ্য
ছিল-ধনধান্যে ভরা একটি সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলা। সেই কথা কি মানুষ ভুলে গেছে। কি
কথা ছিল আমাদের এই বাংলাদেশকে স্বাধীন করার পর একটি সোনার বাংলাদেশ তৈরি করার কথা
কি ছিল না? এখন প্রতিটি মানুষ হয়ে গেছে চাকরি নির্ভর। বাংলাকে বাস্তবিক
সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে আমার লক্ষ্যের কোন বিকল্প নেই।
আমার দেশের জন্য আমি এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। আমি চাই একটি সুন্দর সোনার
বাংলাদেশ হোক আমাদের এই দেশ। সেজন্য আমাদের দেশের জন্য খাটতে হবে, দেশের জনগণের
জন্য খাটতে হবে। শুধু ওই এসি ঘরের মধ্যে থেকে সোনার বাংলাদেশ করা সম্ভব নয়।
তাহলে শুধু নিজের কথায় ভাবা হলো দেশের মানুষের কথা আর ভাবা হলো না।
সতর্কতা অবলম্বন
আমাদের দেশের কৃষক ভোঁতা লাঙ্গল, রুগ্নহালের বলদ ও নিকৃষ্ট বিষ দিয়ে সারহীন
জমিতে যত সম্ভব অল্প পরিমাণ ফসল ফলিয়ে চলছে। শেষের জন্য তারা ঠিকমতো পানি
পায় না। চোখের জলে আর ঘামে মাটি ভিজে উঠে তবুও নদী পরিকল্পনার জল এসে আমাদের
জমিতে পৌঁছায় না। অনেক অঞ্চলে এমন অসুবিধা রয়েছে কিন্তু এখন বিজ্ঞান অনেক উন্নত
হওয়ার ফলে জমিতে শেষ দেওয়া হঠাৎ পানি দেওয়ার অশান্তি থেকে অনেকটুকুই রেহাই
পেয়েছে কৃষক।
তাই আমি নতুন উদ্যমে হতাশাগৃষ্ট কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে চাই। আমি কৃষি সেবার
মাধ্যমে যতটুকু সাধ্য দেশ সেবা করে যাব। আর এরই মাঝে আমার জীবনের স্বপ্ন ও
লক্ষ্যের সার্থকতা নিহিত হবে বলে মনে করি আমি। তবে আমার লক্ষ্যকে কেউ যদি ছোট করে
দেখে তাহলে সে আর যাই হোক দেশকে ভালোবাসে না দেশের মানুষকে ভালোবাসে না। এবং সে
একজন বোকা মানুষ।
উপসংহার
বাংলাদেশ হলো কৃষি প্রধান দেশ। কৃষি সাধনায় দেশের সমৃদ্ধ অর্জনের মূল চাবিকাঠি।
কৃষিই দেশের সকল উন্নয়নের রুদ্ধ দ্বার খুলে দেবে। মানুষের মুখে হাসি ফুটবে। আমার
বিশ্বাস যদি আমার চেষ্টায় কোন ত্রুটি না থাকে এবং মনের একাগ্রতা অটুট থাকে তবে
আমি এই বিষয়ে নিশ্চয়ই সফলতা লাভ করব। কবে বলে গেছেন
"মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পতন"। এর সহজ বাক্য আমার সাফল্যের সিংহাসনে
পৌঁছে দেবে, আমার প্রাণের নতুন অদম্য ও নতুন প্রেরণা জাগাবে।
আরো পড়ূনঃ ছাত্র জীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা
আর স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করব- "তোমার পতাকা যারে দাও
তারে বহিবারে দাও শক্তি"
আমাকে শক্তি দাও সামর্থ্য দাও মনে প্রানে বাস্তবায়নের অপরাজয়ের উৎসাহ
দাও।
লেখকের মন্তব্যে আমার জীবনের লক্ষ্য রচনা
তোমরা যারা শিক্ষার্থী আছ তারা আমার জীবনের লক্ষ্য রচনা কিভাবে লিখবে বুঝতে পারো
না। আমাদের এই রচনাটি পড়লে তুমি খুব সহজে সুন্দরভাবে যেকোনো পরীক্ষার খাতায়
লিখতে পারবে। আমাদের এই ওয়েবসাইটে প্রতিনিয়ত সুন্দর সুন্দর, মানুষের নিত্য
প্রয়োজনীয় সহ আরো বিভিন্ন ধরনের পোস্ট করা হয়। একদম নির্ভরযোগ্য এবং সঠিক তথ্য
সহকারে। তাই আমাদের ওয়েবসাইটের সাথে থাকুন এবং নতুন পোস্টের নোটিফিকেশন পেতে হলে
নিচে থাকা বেল আইকনটি ক্লিক করুন।
SHAMSA2Z নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url