স্বাধীনতা দিবস রচনা

স্বাধীনতা দিবস রচনা সম্পর্কে আজকের আমাদের এই আর্টিকেলটি। শুধুমাত্র পড়াশোনা ক্ষেত্রে বা পরীক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের এই স্বাধীনতা দিবস সম্পর্কে পড়তে হবে এবং লিখতে হবে এর জন্য নয়। আমাদের দেশ সম্পর্কে জানতে হবে।

স্বাধীনতা দিবস রচনা

আমরা কিভাবে স্বাধীনতা দিবস টি পেয়েছি সে সম্পর্কে জানতে হবে। আমাদের দেশের ইতিহাস সম্পর্কে আরো জানতে হলে আমাদের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আমরা স্বাধীনতার বিভিন্ন ইতিহাস এবং স্বাধীনতা দিবস সম্পর্কে সম্পূর্ণ আলোচনা করেছে এখানে।

পোস্ট সূচীপত্রঃ স্বাধীনতা দিবস রচনা

ভূমিকা

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস একটি ঐতিহাসিক ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। আমাদের জীবনে এই দিনটির গুরুত্ব অপরিসীম। এটি নব প্রত্যয় ও শপথ গ্রহণের দিন। ১৯৯১ সালের ২৬ শে মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের প্রথম স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। দেশকে স্বাধীন করার জন্য বাঙালি নিয়েছিল দীপ্ত শপথ। পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণের নাগপাশ থেকে নিজেদের মুক্ত করার জন্য এবং আপন পরিচয় খোজার নিমিত্তে সেদিন বাঙালি গর্জে উঠেছিল।

দীর্ঘদিনের শোষণ ও নিপীড়ন ভেঙে আবহমান কালের গৌরবময় সাহসিকতার ইতিহাসে যেন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেদিন এ জাতির ভেতরে। তাই সর্বোচ্চ ত্যাগ করে সেদিন বাঙালি অর্জন করেছিল স্বাধীনতার সোনালী সূর্য। আর সেদিন থেকে আমরা স্বাধীনতা দিবস নামে দিনটিকে স্মরণীয় করে রেখেছি।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস রচনা উদঘাটন করলে আমরা দেখতে পাই যে, বাংলাদেশের জন্য স্বাধীনতা দিবস আত্মত্যাগ ও আত্ম অহংকারের একটি দিন। ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ এ দেশের মানুষ পৃথিবীর বুকে নতুন একটি মানচিত্রের সৃষ্টি করে। বাঙালির মুক্তির সমস্ত আকাঙ্ক্ষা সম্মানিত হয়েছিল সেদিন। আকাশের নক্ষত্র রাজির মতো ছোট বড় হাজারো ঘটনার জন্ম হয়েছিল সেদিন। সমস্ত জাতি যেন একই অঙ্গীকারে শপথ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুক্তিযুদ্ধে।

রক্ত স্নাত হয়ে এ সবুজ শ্যামল বাংলা অন্যরূপ পেয়েছিল সে সময়। সবুজ ঘাসের উপরে শহীদদের সেই লাল রক্ত রক্তের স্রোত যেন চোখে দেখার মত ছিল না। বাংলাদেশের ক্ষরণের বীরত্বের ইতিহাস  চর্চিত  হয়েছে বহুভাবে বহু স্থানে। বাঙালির রক্তক্ষরণের মুক্তিযুদ্ধের ফলে আমরা আজ স্বাধীনভাবে চলতে পারি আমরা আজ স্বাধীন ভাবে জীবন যাপন করতে পারছি।

স্বাধীনতা দিবসের ঐতিহাসিক পটভূমি

১৯৪৭ সালের দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তান দুটি রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। তবে সেসময় একই ভূখণ্ডের নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান। দীর্ঘদিনের ইংরেজ শাসন থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতার সু বাতাস পাবে তা ছিল এই অঞ্চলের মানুষের একান্ত প্রত্যাশা। কিন্তু পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হলেও এ অঞ্চলের মানুষের শোষণ মুক্তি ঘটেনি। পূর্ব পাকিস্তান রাষ্ট্রের অত্যাচার ও নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ। পাকিস্তানীদের প্রকৃত চেহারা উপলব্ধি করে মানুষের মনে ধীরে ধীরে দানা বেঁধে উঠে স্বাধীনতা স্বপ্ন।


অবশেষে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ স্বাধীনতার জন্য ডাক দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ময়দানে বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য প্রস্তুত হতে বলেন তিনি। তবে তিনি ছাড়া আরও অনেক মানুষের এই স্বাধীনতার জন্য ব্যাপকভাবে ভূমিকা রয়েছে। ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ রাতে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড চালাই ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। সেই রাতকে আমরা রাত কাল রাতে হিসাবে চিনি। এ রাতে হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ মানুষ হত্যা হয় পাকিস্তানের হাতে।

শুধু শহীদের বিনিময়ে নয় এই স্বাধীনতা পেয়েছে আমরা লক্ষ লক্ষ নারীর ইজ্জতের বিনিময়েও। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ছোট ছোট শিশুদের থেকে শুরু করেন বৃদ্ধ পর্যন্ত যত মানুষ তাদের নজরে পড়েছে সকলকে তারা নির্বিচারে হত্যা করেছে। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল তারা এদেশের বাঙালির মাতৃভাষা অর্থাৎ বাংলা ভাষাকে ছিনিয়ে নিবে। স্বাধীনতা দিবস রচনা থেকে আমরা এগুলো দেখতে পাই।

স্বাধীনতা অর্জনের সংগ্রাম

স্বাধীনতা অর্জনের সংগ্রাম একদিনে সংঘটিত হয়নি। বহুদিন ধরে ধীরে ধীরে সংগ্রাম মহীরূহ রূপ  পেয়েছে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম সোপান। ইতিহাসবিদের মতে ভাষা আন্দোলনের স্বাধীনতার বীজ নিহিত ছিল। এরপর ১৯৬২ সালে ছাত্র আন্দোলন, ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা প্রণয়ন এবং তৎপরবর্তী আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের ঘটনার স্বপ্ন নিহিত ছিল বাঙ্গালীদের মনে।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগকে এদেশের মানুষ ভোট দিয়েছিল। কিন্তু শাসকদের চক্রান্তের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পারেনি তারা। তবে প্রবঞ্চনা ও পরবর্তীকালে ইতিহাসের ভিন্নতম গণহত্যায় বাঙ্গালী স্বাধীনতা অর্জনের আন্দোলনকে চরমতম রূপ দেয়।

স্বাধীনতা অর্জনের মুক্তিযোদ্ধ

স্বাধীনতা অর্জনে এদেশের মানুষ সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে এ দেশের মানুষ প্রাণ দিয়েছে। অত্যাচারিত হয়েছে সংগ্রাম হারিয়েছেন কয়েক লক্ষ মা বোন। আল বদর, আল সামস ও শান্তি কমিটির সদস্যরা পাকিস্তানিদের দোসর হিসেবে কাজ করেছে। এ দেশের সর্বস্তরের মানুষ যখন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে, তখন দেশীয় ওই রাজাকারদের তৎপরতায় বহু মানুষ সর্বশ্রান্ত হয়েছে, সম্ভ্রম দিয়েছে, প্রাণ দিয়েছে।
স্বাধীনতা অর্জনের মুক্তিযুদ্ধ
বহু মুক্তিযোদ্ধাদের পাকিস্তানের হাতে তুলে দিয়েছে এর রাজাকার বাহিনী। এই শত্রুদের বিনাশ করে স্বাধীনতা অর্জন করতে একটি সামরিক পরিকল্পনা করে তৎকালীন অস্থায়ী সরকার। সে সরকার গঠিত হয় ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল মেহেরপুরের মুজিবনগরে। মুক্তি বাহিনী সর্বাধিনায়ক নিযুক্ত হন কর্নেল  এম এ জি ওসমানী। তার নেতৃত্বে এবং বন্ধু রাষ্ট্র ভারতের মিত্রবাহিনীর তৎপরতায় ও সহযোগিতায় ৯ মাস রক্তক্ষ হয়ে যুদ্ধের পর এদের স্বাধীন হয়।

স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য

আমাদের জন্য স্বাধীনতা দিবসের মূল তাৎপর্য হলো এটি আমাদের ত্যাগ ও মুক্তি সংগ্রামের গৌরবময় একটি দিন। আমাদের আত্মপরিচয়ের গৌরবে উজ্জ্বল, ত্যাগে ও বেদনায় মহিয়ান। এই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এদেশের বঞ্চিত নিপীড়িত সাধারণ মানুষ মুক্তির নতুন দিশা অর্জন করেছিল। স্বাধীনতা অর্জনের জন্য মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে সে ইতিহাস রচিত হয়েছে তা এ দেশের মানুষের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হাতে যুগে যুগে প্রেরণা যোগাবে। স্বাধীনতা দিবস রচনা তে উল্লেখিত এই বিষয়গুলি লক্ষ্য করি আমরা।


তাই প্রতিবছর ২৫ শে মার্চ এলে বাঙালি নতুন শপথ গ্রহণের মাধ্যমে উজ্জীবিত হয়।আসলে স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করে শেষ করা যাবেনা। বাঙ্গালীদের জীবনে স্বাধীনতা দিবস একটি এমন দিন যা কখনোই ভুলে যাওয়ার মত নয়। তাই বারবার ফিরে আসে আমাদের এই স্বাধীনতা দিবস।

স্বাধীনতার লক্ষ্য অর্জনের মূল্যায়ন

স্বাধীনতার মূল অর্থ হলো স্বাধীনতা থেকে মুক্তি আত্মউন্নয়নের মাধ্যমে স্বাধীনভাবে নিজেকে বিকশিত করার সুযোগ লাভ। প্রতিটি স্বাধীনতা দিবস আমাদের জীবনে এনে দেয় নতুন সম্ভাবনা। আমরা নিজেদের ভেতর স্বাধীনতার স্বাদ কতটা অনুভব করতে সমর্থ্য হচ্ছে তা মূল্যায়ন করি। স্বাধীনতার সুফল আমরা দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে পারছে কিনা তাও আমরা ভেবে দেখি। তবে এক্ষেত্রে আমাদের যেমন আসা যোগানোর কিছু দিক রয়েছে তেমনি অনেক হতাশার। স্বাধীনতার সুফল সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে পারলে কেবল শহীদদের আত্মত্যাগ সমর্থক হতে পারে।

স্বাধীনতার স্বপ্ন ও বর্তমান বাস্তবতা

স্বাধীনতার লক্ষ্য ছিল একটি শোষণমুক্ত ধর্মনিরপেক্ষ সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার রাষ্ট্র প্রবর্তন করা। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সবাইকে স্বনির্ভর করেছিল স্বাধীনতার স্বপ্ন। মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই লক্ষ্য নিয়ে দেশ গঠন শুরু করেছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সামরিক বাহিনী বিপদগামী সদস্যের হাতে সপরিবারে নিহত হয়। ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পরবর্তী সময়ের বিভিন্ন এক নায়ক সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসেছিল।

১৯৯০ সালের স্বৈরাচার পতনের মধ্য দিয়ে দেশে পুনরায় গণতন্ত্রের পথে যাত্রা সূচিত হয়। আসার কথা এই যে বর্তমান সরকারের আন্তরিক প্রদেশের মধ্য দিয়ে আজ বাংলাদেশ উন্নতশীল রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। এবং ভবিষ্যতে আমাদের বাংলাদেশ হবে সোনার বাংলাদেশ আশা করা যায়। স্বাধীনতা দিবস রচনা লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে পাই আগের বাংলাদেশ কেমন ছিল এখন কেমন।

সমাজ প্রগতি ও স্বাধীনতা

সমাজের প্রগতি হলো স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য। তার জন্য প্রয়োজন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোয় দীপ্ত শপথ গ্রহণ। দেশের সর্বস্তরের মানুষের মেধা ও পরিশ্রমকে কাজে লাগিয়ে গড়ে তুলতে হবে উন্নয়নের নতুন মাইল ফলক। প্রগতির পথে সমাজকে পরিচালিত করতে স্বাধীনতার মূল স্তম্ভ গুলোকে লালন করতে হবে এবং সে অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা করতে হবে। এ পথে সাময়িক ব্যর্থতা পরিলক্ষিত হলেও তা ভবিষ্যৎকালে স্বাধীনতার বৃহদার্থকে সমাজের সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেবে।
স্বাধীনতা অর্জনের মুক্তিযুদ্ধ

উপসংহার

স্বাধীনতা দিবস রচনা করতে গিয়ে শেষ পর্যায়ে এসে কিছু কথা বলতে চাই। মানুষ জন্মগত ভাবে স্বাধীনতার অধিকারপ্রাপ্ত হয়। কিন্তু বর্তমানে দেশে ও বিশ্বে পরাধীনতার যেন সবাইকে ধীরে ধীরে গ্রাস করছে। আমাদের সমাজেও সুপ্তভাবে এই প্রক্রিয়াটির লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু ভুললে চলবে না আমাদের স্বাধীনতা অনেক রক্তের দামে কেনা, শহীদদের এই পবিত্র রক্তের দায় জাতি হিসেবে আমাদের সবারই। সেই দায় শোধ করতে পারে কেবল স্বাধীনতাকে সবার জন্য সভ্য করে তোলার মাধ্যমে।

আমরা যদি এই স্বাধীনতার এবং এই শহীদের মর্ম না দিতে পারি তাদের রক্তের যদি মর্ম না দেয় তাহলে এই স্বাধীনতা আর কেমন স্বাধীনতা হলো। তাহলে তো তাদের মান রাখা হলো না স্বাধীনতার মান রাখা হলো না। তাই আমরা সবসময় স্বাধীনতাকে রক্ষা করার চেষ্টা করব এবং শহীদদের সম্মান এবং দোয়া করব। এই প্রত্যয় নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে ভবিষ্যৎ কালের পথে।

লেখকের মন্তব্যে স্বাধীনতা দিবস রচনা

আপনাদের সুবিধার্থে স্বাধীনতা দিবস এই রচনাটি অনেক সহজ ভাবে ও সুন্দরভাবে লিখা রয়েছে। যদি আপনি এই রচনাটি এই পোস্টটি সুন্দরভাবে মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে অবশ্যই বুঝতে পারবেন আমরা কিভাবে কত সুন্দর হবে এবং কত সহজভাবে উপস্থাপন করেছি। প্রায়শই দেখা যায় বিভিন্ন পরীক্ষায় রচনাটি চলে আসে। আমাদের এই রচনাটি ভালো লাগলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন তারা উপকৃত হবেন। এবং কোন ভুল থাকলে রচনার মধ্যে নিচে কমেন্টে বলে যাবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

SHAMSA2Z নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url